রাত ১২:২৬, ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতু। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে পদ্মা সেতু এলাকা। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। সেতুর আশপাশের সড়কগুলোতে বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। বাড়ানো হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি, সাইবার মনিটরিং এবং পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সমাবেশস্থল ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কঠোর নজরদারি চলছে।
জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পদ্মার সেতুর উদ্বোধন ঘুইরে প্রচুর লোকসমাগম হবে। উদ্বোধনের আগে-পরে কেউ যাতে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেতুর আশপাশে র্যবের ওয়াচ টাওয়ার, কন্ট্রোল রুম, ডগ স্কোয়াড থাকবে। পাশাপাশি মাঠে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের গুজব ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
‘এছাড়াও সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মৌলভীবাজারে পারাবত ট্রেনের বগিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে’-যোগ করেন মশিউর রহমান।
সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশপাশি পুরো সেতু এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। পদ্মার দুই পাড়ে নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে দুই পাড়ের পুরো এলাকা। ইতোমধ্যে দুই পাড়ে ‘পদ্মা সেতু উত্তর’ ও ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ’ নামে নতুন দুটি থানার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। থানাগুলো তদারকি করবেন দুজন সহকারী পুলিশ সুপার। ২৪ ঘণ্টাই নদীতে স্পিডবোট দিয়ে টহল দেবে নৌ-পুলিশ। এছাড়া থাকবে হাইওয়ে পুলিশও। মূলসেতুর উদ্বোধন ২৫ জুনহলেও আগামীকাল মঙ্গলবার ভার্চ্যুয়ালি থানা দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই থানা দুটির কার্যক্রম শুরু হবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সেতুর নিরাপত্তায় দুইটি থানা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরেই এর কার্যক্রম শুরু হবে।’
জানা গেছে, প্রায় ৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবন দুটি নির্মাণ করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন প্রতিটি থানায়। সংযোগ সড়কের টোল প্লাজার পাশে থানা ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তেই দুটি করে ইউনিয়ন এই থানা দুটির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তের থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমণ্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন। জাজিরা পয়েন্টের থানার আওতায় থাকবে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। থানা দুটির প্রতিটিতে একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, ‘সেতুর নিরাপত্তায় আমরা সচেতন আছি। যাতে কোনো ধরনের অপরাধ সংগঠিত না হয়। বিভিন্ন সংস্থার নির্দেশনার পাশাপাশি বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি আছে।’
আগামী ২৫ জুন বহুল প্রত্যাশিত এই সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে। এ কারণে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা-উপজেলায় এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ উপলক্ষে জাজিরায় জনসভার আয়োজন করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই জনসভায় অন্তত ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। জনসভা ও নিরাপত্তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা। সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে পুলিশসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সবকটি সংস্থার পক্ষ থেকে।
পুলিশ সদর দফতরে আইজিপির নেতৃত্বে বৈঠক করেছেন ঊর্ধ্বতনরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বি এম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক নিহত ও দুই শতাধিক আহত হওয়া, রাজধানীতে বাসে আগুন, রাজধানীর বাইরে ট্রেনে আগুন লাগার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সেতু উদ্বোধনের আগেই এ ঘটনাগুলো কোনও স্যাবোটাজ কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। তবে সেতুর উদ্বোধন ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় এজন্য রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বাসা-বাড়ি, ছাত্রবাস এবং হোটেল নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে ডিএমপির সব থানাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এসব বিষয়ে কাজ করছে।