বিকাল ৪:৫৩, ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যেভাবে একের পর এক এলাকা দখল করল তালেবান

প্রতিদিনই আফগানিস্তানের নতুন নতুন নতুন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে তালেবান। আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী কোনো কোনো এলাকা থেকে পালিয়েছে আবার কিছু এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

বিবিসির আফগান সার্ভিসের গবেষণা উঠে এসেছে, ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে গজনি, মাইদান ওয়ার্দাকসহ আফগানিস্তানজুড়ে তালেবান যোদ্ধাদের এখন সরব উপস্থিতি। এ ছাড়া কুন্দুজ, হেরাত, কান্দাহার ও লস্কর গাহসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তালেবান।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ হামলা চালায় আল-কায়েদা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনসহ জঙ্গিসংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের আশ্রয় দিয়েছিল তালেবান। এ হামলার জেরেই আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাহিনী, তাদের সামরিক জোট ন্যাটো ও আঞ্চলিক মিত্রদের হামলার মুখে ২০০১ সালের নভেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান।

তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। শত শত কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু তার মধ্যেও দেশটির প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় তালেবান আবার সংগঠিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে নিজেদের শক্তি বাড়াতে থাকে তারা।

২০০১ সালে পর যেকোনো সময়ের তুলনায় আফগানিস্তানের অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। তালেবানের কোনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অর্থ হলো, সেখানকার প্রশাসনিক কেন্দ্র, পুলিশ দপ্তর ও সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকা।

আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের হেলমান্দ, কান্দার, উরুজগান, জাবুল প্রদেশে ঐতিহ্যগতভাবেই তালেবানের অবস্থান শক্তিশালী। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা ফারিয়াব ও বাদাখশানেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী।

আফগানিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তক্রসিংও তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ফলে, সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি তালেবান নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে কী পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি।

ইরানের সঙ্গে লাগোয়া আফগানিস্তানের ইসলাম কালা সীমান্ত থেকে সরকার মাসে দুই কোটি মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম। তালেবান এমন ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় আমদানি-রপ্তানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে গেছে।

তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে আফগান সরকার বিপদে আছে। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব বড় শহরে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। তালেবান ঠেকাতে মাসব্যাপী রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি যখন এই, তখন মার্কিন বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য আফগানিস্তান ছেড়ে গেছেন। শুধু কাবুলে নিরাপত্তার জন্য কিছু সেনা রয়ে গেছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ার প্রেক্ষাপটে কিছুদিন ধরে তালেবানের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে মার্কিন বিমানবাহিনী।

সূত্র : বিবিসি